ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে ভিক্ষুক হাসপাতালে

image_157788_0অনলাইন ডেস্ক :::

চেহারা, বেশ ভুষাণ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল তিনি একজন ভিক্ষুক। বয়স কমপক্ষে ৬৫ বছর। আচরণ করছেন অনেকটাই পাগলের মতো। ঘড়িতে তখন বাজে রাত ১০টা। রাজবাড়ী রেলস্টেশন এলাকায় ওই ভিক্ষুকের এমন অবস্থা দেখে মায়া হয় এক রিকশাচালকের। তিনি ওই বৃদ্ধকে তার রিকশায় তুলে নিয়ে আসেন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।

চিকিৎকসহ সেখানে থাকা হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরা ওই বৃদ্ধের সুস্থতার ব্যবস্থা করেন। এ সময় রিকশাচালকসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা বৃদ্ধের সাথে থাকা একটি ব্যাগ সন্দেহ বশঃত তল্লাশী চালায়। তবে তল্লাশীর শুরুতেই তাদের চোখ ওঠে কপালে। পুরো ব্যাগ ভর্তি টাকা।

বুধবার দুপুরে রাজবাড়ী হাসপাতালের নিচ তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৯ নং শয্যার মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখা যায় ওই বৃদ্ধ ভিক্ষুককে। নাম ঠিকানা জানতে চাওয়া হলে তিনি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। ক্যামেরার লাইটের আলোর ঝলকে হঠাৎই চঞ্চল হয়ে ওঠেন তিনি।

বলেন, “আমি এখন চোখে কিছুই দেখবার পারতাছি না। তুমি আর ওই লাইট জ্বলাইও না। আমার চোখ কানা হইয়া যাইবো।”

তার পাশের সিটে থাকা অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, এই বৃদ্ধ সব সময় এলো মেলো কথা বলছে। তবে এখনো তার নাম জানা যায়নি। যদিও এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ। তবে মাঝে মধ্যে সে টাকার কথা বলে। কত টাকা আছে তার ব্যাগে তা ওই ভিক্ষুক নিজেও জানে না।

তবে অনেকেই বলেছেন, এই ভিক্ষুককে প্রতিদিনই রাজবাড়ী বাজার ও পৌরসভার  বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করতে দেখেছেন।

রাজবাড়ী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জুবায়ের জানান, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন রিকশাচালক এই বৃদ্ধকে রাজবাড়ী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তিনি সে সময় ওই বিভাগে কর্মরত ছিলেন। বৃদ্ধের অবস্থা সে সময় ছিল অনেকটাই নাজুক। তবে বিপত্তি ঘটে রিকশায় থাকা ওই বৃদ্ধের বড় আকারের ব্যাগ নিয়ে। রিকশাচালক ও হাসপাতালে কর্মচারীরা ওই ব্যাগটি আনতে গিয়ে উৎসুকভাবে খোলেন সেটি। তবে ব্যাগের মুখ খোলার পর সবাই হতবাক হই। পুরো ব্যাগ ভর্তি শুধু টাকা আর টাকা।

ওই টাকার মধ্যে রয়েছে, ১০০, ৫০, ২০, ১০, ৫ ও ২ টাকার নোট। এ সময় ব্যাগ খুলে টাকা গোণার চেষ্টা করে কিছু কর্মচারী। তবে তাদের হস্তক্ষেপে টাকা গণনার কাজ বন্ধ করা হয় এবং টাকাগুলো ফের ব্যাগে পুরে দায়িত্বরত জরুরি বিভাগের ব্রাদার আব্দুর রবের জিম্মায় দেয়া হয়। এখনো টাকাগুলো ওই ব্রাদারের জিম্মায় রয়েছে। যে কারণে সে সময়ই বিষয়টি রাজবাড়ী থানা পুলিশকে জানানো হয়।

রাজবাড়ী হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল হাসান বাবলু বলেন, বৃদ্ধকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করা হচ্ছে।

তবে বুধবার বিকেল পর্যন্ত তার নাম ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। নাম জিজ্ঞাসা করলে একেক সময় একেক নাম বলছেন। তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে ওই বৃদ্ধের স্বজনদের খোঁজা।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে, তাই ব্যাগ ভর্তি টাকাসহ ওই বৃদ্ধকে এখন ছেড়ে দেয়াটাও বিপদজনক।

রাজবাড়ী থানার এএসআই রমজান খন্দকার বলেন, ওই বৃদ্ধ ভিক্ষুকের টাকা গণনা করা হয়নি। ব্যাগ ভর্তি অবস্থায় তা হাসপাতালে রক্ষিত আছে।
 

পাঠকের মতামত: